• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজ বিরলের বহলা ট্রাজেডী দিবস  

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩  

আজ ১৩ ডিসেম্বর দিনাজপুর বিরলের বহলা ট্রাজেডী দিবস। এদিনে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হয়ে ছিল ৩২ টি তাজা প্রাণ। এই গ্রামে এদের একত্রে গণকবর দেয়া হয়েছিল। ১১ বছর পূর্বে গণকবরটিতে দৃষ্টিনন্দন একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। দিবসটি উদযাপনে গ্রহন করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মসুচী।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাঙালী সংঘবদ্ধ মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পাক সেনারা পিছু হাঁটতে থাকে। এই দিনে উপজেলার ভান্ডারা কিংবা রাণীপুকুর ইউপি থেকে পাকসেনারা পিছু হেঁটে দিনাজপুর শহরের দিকে আসতে থাকে। সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে কাঞ্চন জংশন এবং রেল ব্রীজ সংলগ্ন বিজোড়া ইউপি’র বহলা গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে পথিমধ্যে নিরীহ গ্রামবাসীর নিকট মুক্তিবাহিনীর সংবাদ জানতে চায় পাক হানাদার বাহিনী। কারণ এ গ্রামের সন্নিকটে সারাঙ্গাই-পলাশবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ছিল, যা আশপাশেই হবে মর্মে অনুমান করেছিল তারা। কিন্তু কোন গ্রামবাসী মুখ খুলেনি। ফলে প্রথমে তাদের গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। পরবর্তিতে আবার একত্র হয়ে পুরুষদের সারিবদ্ধভাবে দাড়াতে বলে পাক সেনারা। কিছুক্ষণের মধ্যে মাগরিবের নামাজ হবে জানিয়ে গ্রামবাসী নামাজ আদায় করতে চাইলে নামাজের অনুমতি পায়। নামাজ শেষ হওয়ার মুহুর্তে আবারো সারিবদ্ধ হতে বলেই নির্মম ফায়ারিং শুরু হয়। নিমেষেই ৩২ টি তরতাজা প্রাণ হারিয়ে যায়। দু’জন বাদে এদের সবাইকে একত্রে গণকবর দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছরেও এরা শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন স্বীকৃতি পাননি। তাদের অনেকের পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটালেও সরকারের পক্ষ হতে সহানুতি বঞ্চিত হয়ে রয়েছে অনেক পরিবার। এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার রহমান আলী জানান, আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শহীদ ও আহতদের তালিকা প্রেরণ করেছি।

এছাড়াও সেদিন আহত অবস্থায় বেঁচে যান ৫ জন। পরের দিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ১৪ ডিসেম্বর বিরলসহ দিনাজপুর শত্রু মুক্ত হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ওই গ্রামের আনিছুর রহমান বাবুল জানান, ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ দিনাজপুরবাসী বিডিআর সেক্টর সদর দপ্তর কুঠিবাড়ীতে হামলা চালিয়ে দখল করে নেয়। সেখানকার রসদ লুট করে আনা হয় বহলায়। তাছাড়া এই বহলা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম ঘাটি। তাই খান সেনাদের আক্রোশ ছিল এ গ্রামের উপর। ফলে সেদিন গ্রামের নিরীহ পুরুষদের সারিবদ্ধভাবে গুলি চালোনো হয়েছিল। গুলিবিদ্ধ হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। পরবর্তীতে তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে নিজ খরচে দু’দফা অপারেশনের মাধ্যমে গুলি শরীর থেকে অপসারণ করেছেন।

উল্লেখ্য, স্থানীয় সংসদ সদস্য নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে গণকবরের পাশে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতি বছর দিনটিকে ঘিরে শহীদদের পরিবার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানা কর্মসূচী পালন করে থাকে। এবারেও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ, কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা ও দোয়া খায়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে “বহলা বদ্ধভুমিতে” শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহন করবেন।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –